ফেসবুকফেসবুকের যুগ চলছে। ফেসবুক
ব্যবহারকারীরা এখন বন্ধু বা পরিচিতজনের জন্মদিনের শুভেচ্ছা ফেসবুকেই লিখে জানিয়ে
দেন। অনেকেই লেখেন ‘হ্যাপি বার্থডে’ বা নানা মন্তব্য। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাউকে ফেসবুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা
জানানো মানে নিজের বিপদ ডেকে আনা। সাধারণ ও নিরীহ একটি পোস্ট থেকেই আপনার
অ্যাকাউন্টের তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে দুর্বৃত্তরা। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এ তথ্যই
উঠে এসেছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ট্যাবলয়েড পত্রিকা দ্য সানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য
জানানো হয়।
দ্য সানের প্রতিবেদনটিতে বলা
হয়েছে, সাম্প্রতিক
সমীক্ষা বলছে, যখন কোনো
বন্ধুকে ফেসবুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো হয়, তখন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক
হওয়ার এবং ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। নিরীহ শুভেচ্ছা জানানোর পোস্টের
পাশাপাশি অন্যান্য ফেসবুক পোস্ট ঘেঁটে সাইবার দুর্বৃত্তরা যথেষ্ট তথ্য হাতিয়ে নিতে
পারে এবং তা পরে স্পর্শকাতর তথ্য বের করার কাজে লাগায়।
যুক্তরাজ্যে ১৬ থেকে ২৫ বছর বয়সী
উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ব্যক্তির মধ্যে একটি সমীক্ষা চালিয়ে এ তথ্য পাওয়া যায়। তাতে
দেখা গেছে, ৮৩ শতাংশ
অনলাইনে অতিরিক্ত তথ্য শেয়ার করে—এমন বন্ধু বা ব্যক্তিকে সহজেই চিনতে পারেন। এ
ধরনের অতিরিক্ত পরিমাণ ফেসবুকে পোস্টকারী ব্যক্তি সহজেই চিহ্নিত হন। তাঁরা ক্রমাগত
ফেসবুক পোস্ট করতে থাকেন এবং নিজেদের গোপনীয়তা বজায় রাখতে পারেন না। ফেসবুকে
অতিরিক্ত পোস্টকারী ব্যক্তিরা রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, ছুটির দিনের কাজকর্মের মতো নানা
বিষয় পোস্ট করেন। এতে দুর্বৃত্তদের জন্য পোস্টকারী ব্যক্তির ওপর নজরদারি করতে
সুবিধা হয়। এতে বাড়ির নিরাপত্তা-ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।
এ ছাড়া ৫৬ শতাংশ ব্যক্তি তাঁদের
বর্তমান অবস্থান ফেসবুকে শেয়ার করেন। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হ্যাকারদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ
হয়ে ওঠে। তখন অনেকের অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে যায়। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ২৫ শতাংশ
ব্যক্তি বলেছেন, বন্ধুদের
পাঠানো ভুয়া লিংকে ক্লিক করার পর তাঁদের অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে। একবার অ্যাকাউন্ট
হ্যাক হলে সব তথ্যই দুর্বৃত্তদের হাতে চলে যায়।
ব্রিটিশ মিউচুয়াল ফিন্যান্সিয়াল
ইনস্টিটিউশন নেশনওয়াইড বিল্ডিং সোসাইটির মতে, প্রাইভেসি সেটিংস সর্বোচ্চ থাকলেও
তখন আর কোনো লাভ হয় না। হ্যাক করার পরে দুর্বৃত্তরা ব্যাংকের তথ্য বা অন্য
স্পর্শকাতর তথ্যগুলো কাজে লাগায়। হ্যাকিংয়ের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের ১১ শতাংশের মত
হচ্ছে, অ্যাকাউন্ট
হ্যাকের পর নিজের বা বন্ধুর অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া তাদের নামে
ভুয়া অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে।
নেশনওয়াইডের বিশেষজ্ঞ স্টুয়ার্ট
স্কিনার বলেন, মানুষের
সঙ্গে যোগাযোগের জন্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম দারুণ পদ্ধতি। তবে এতে কোন তথ্য
শেয়ার করা হচ্ছে, তা ভাবা
গুরুত্বপূর্ণ। তথ্য যাতে বেহাত না হতে পারে, তা ভাবতে হবে।
পরামর্শ:
* বন্ধু বা
ঘনিষ্ঠজনের পাঠানো যেকোনো লিংকে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন। কোনো রকম সন্দেহ হলে
এর উৎস আগে নিশ্চিত হন।
* ফেসবুক বা
মেসেঞ্জারে ব্যাংক সম্পর্কিত কোনো তথ্য বা কোনো স্পর্শকাতর তথ্য শেয়ার করবেন না।
ব্যক্তিগত মনে হলেও একবার হ্যাক হলে তা বেহাত হয়ে যাবে।
* প্রাইভেসি
সেটিংসে গিয়ে আপনার পোস্ট কারা দেখতে পাবে, তা ঠিক করে দিন।
* অপরিচিতজনের
বন্ধু হওয়ার অনুরোধ যাচাই-বাছাই না করে গ্রহণ করবেন না।
* মাঝেমধ্যে
বন্ধুদের তালিকা দেখুন। যাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ কম বা প্রায় অপরিচিত, তাদের বিষয়টি পর্যালোচনা করুন।
* ফেসবুকে
ব্যক্তিগত তথ্য কতটা পোস্ট করবেন, সে বিষয়ে সচেতন থাকুন। বিশেষ করে জন্মদিন, জন্মস্থানসহ অন্যান্য ব্যক্তিগত
তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা জরুরি।
* কখন বাড়িতে
থাকছেন আর কখন বাইরে থাকছেন, ফেসবুকে এ ধরনের তথ্য ট্যাগ করার আগে চিন্তা করুন। বাড়ি কখন
খালি থাকে, সে তথ্য
দুর্বৃত্তদের না জানানোই ভালো।
* ছুটিতে
বাইরে যাওয়ার আগে সব তথ্য ফেসবুকে না দেওয়াই যুক্তিসংগত হবে।